গজওয়া-এ-হিন্দের সিদ্ধান্ত…

babaisraeli.com2021010401344325645645644574756

আরবী শব্দ ‘গজওয়া’ এর অর্থ সামরিক অভিযান, আক্রমণ বা বিজয়, যদিও হিন্দ শব্দের অর্থ হল বর্তমান ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর সাথে যুক্ত সমস্ত অঞ্চল। অর্থাত, আরবী ভাষায় গজওয়া-আল-হিন্দ নামে অভিহিত হওয়া ইসলামী সাহিত্য থেকে উদ্ধৃত ‘গজওয়া-এ-হিন্দ’ নীতিটি কেবলমাত্র বর্তমান ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, তিব্বত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া সহ ওদের নিজস্ব ক্ষেত্রগুলি সমাহিত করে এদের ওপরে ইসলামের বিজয়ের জন্য কার্য করে। বর্তমানে এই মতাদর্শটি ইতিমধ্যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার পূর্ববর্তী অ-ইসলামিক ভূখণ্ডকে বর্তমান ইসলামিক ভূমিতে রূপান্তরিত করে নিজের লক্ষ্যে 70% এরও বেশি সাফল্য অর্জন করে নিয়েছে। অনুমান করা হয় যে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ-পূর্ব দেশগুলিতে সেক্যুলার ও উদারবাদী জনগণের উপস্থিতির কারণে, এই মতাদর্শটি শীঘ্রই তার অবশিষ্ট 30% এর লক্ষ্যও পূর্ন করবে।

প্রকৃতপক্ষে, ‘গজওয়া-এ-হিন্দ’ নীতিটি ইসলামের মূল বিচারধারা ‘গজওয়া-এ-আলম’ (ইসলামের বিশ্ব-বিজয়) নামক নীতিটির একটি অংশ যেটা বলে যে পুরো পৃথিবী হচ্ছে আল্লাহর এবং এখানে কেবল এবং কেবলমাত্র মুসলমানদেরই বেঁচে থাকার অধিকার আছে (এই সিরিজের পূর্ববর্তী নিবন্ধগুলি দেখুন)। ইসলামী মতাদর্শ অনুসারে বিশ্বের ভূমি দুটি অংশ, ‘দার-উর-ইসলাম’ এবং ‘দার-উর-হার্ব,’ এ বিভক্ত। প্রথম অংশ ‘দার-উর-ইসলাম’ অর্থাৎ ‘ইসলামিক ভূমি’ হল সেই অংশ যার উপর ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত এবং যা আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘শরিয়া’ আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। বিশ্বের ভূমির অপর অংশ ‘দার-উল-হার্ব’, অর্থাৎ ‘যুদ্ধের স্থান’ যেখানে অ-ইসলামিক শাসকরা শাসন করছে। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে কাফের দ্বারা শাসিত জমিকে ইসলামী বিধানের আওতায় আনার জন্য জিহাদ-উল-ফিসাবী-লিল্লাহ (আল্লাহর পথে জিহাদ) করাটা বিশ্বজোড়া মুসলমানদের কর্তব্য।

এই ইসলামী মতাদর্শটি 1,400 বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে চলে আসছে। এই কলুষিত মতাদর্শটির কারণে এই দীর্ঘ সময়কালে অসংখ্য ধর্মীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যেখানে অসংখ্য মানুষের রক্তপাতও ঘটে ছিলো। আজ বিশ্বে প্রায় 5 ডজন ইসলামিক দেশ গঠনের পটভূমিতে এই একই ইসলামিক বিচারধারা রয়েছে।

আসুন আমরা দেখি কুরআন ও হাদিসগুলিতে বর্ণিত এই মতাদর্শ সম্পর্কে কিছু বিষাক্ত তথ্য-

“আমার উম্মাহর দুটি দল আছে যাদেরকে আল্লাহ আগুন থেকে মুক্ত করবেন। প্রথমত তাকে যে ভারতের ওপরে আক্রমণ করবে এবং দ্বিতীয়ত তাকে যে ঈসা ইবনে মরিয়মের সাথে থাকবে।”
-01:​​25:3177, জিহাদের বই, গজওয়া-এ-হিন্দ, সুন্নাহ নাসাই

“আল্লাহর দূত কথা দিয়েছিল যে ওরা ভারতের উপরে আক্রমণ করবে। ও যদি এটি দেখার জন্য বেঁচে থাকে তাহলে ও নিজেকে এবং নিজের সম্পত্তিকে উত্‍সর্গ করবে। ও যদি মারা যায় তাহলে ও শহীদদের মধ্যে একজন হয়ে যাবে এবং যদি ফিরে আসে তাহলে ও হবে আবু হুরায়রা আল-মুহারার (আগুন থেকে মুক্ত)।”
-01:25:3175-3176, জিহাদের বই, গজওয়া-এ-হিন্দ, সুন্নাহ-নাসাই

“অতঃপর যখন হুরমতের চার মাস অতিবাহিত হবে, তখন মুশারিকদের যেখানে পাবে (বেতামুল) হত্যা কর এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার কর এবং বন্দী কর এবং প্রত্যেকটি আক্রমনের স্থানে ত্তৎ পেতে ঘাপটি মেরে বসো তারপর যদি তারা (তখনও শিরক) বাদ দেয় আর নামাজ পড়া শুরু করে এবং জাকাত দেয় তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও (তাদের সাথে তাআরুজ করো না)। নিশ্চয়ই আল্লাহ বড় দয়াবান, তিনি ক্ষমা করবেন।”
-09:05, সূরা আত-তাওবা, কুরআন

“হে বিশ্বাসীগণ! কুফারদের মধ্যে যারা তোমার আশেপাশে রয়েছে তাদের সাথে লড়াই কর এবং (তোমাদের এইভাবে লড়া) উচিত যে তারা তোমার কাছ থেকে নির্মমতা পায় এবং জেনে রাখো যে খোদা নিঃসন্দেহ পরহেজগারদের সাথে আছেন।”
-09:123, সূরা আত-তাওবা, কুরআন

“মোমিনরা, মোমিনিন ব্যতীত, যেন কাফেরদেরকে নিজেদের সারপারাস্ত (রক্ষক, বন্ধু) না করে এবং যদি ওরা সেটা করে তাহলে ওর সাথে খোদার কোনো সম্পর্ক থাকে না, কিন্তু (এই ধরনের যুক্তির দ্বারা) তুমি যদি ওর থেকে (শরিয়া থেকে) বাঁচতে চাও তবে (খয়ের) এবং খোদা তোমাকে নিজের দ্বারাই ভয় দেখায় এবং (তোমাকে) খোদার দিকেই ফিরে যেতে হবে।”
-03:28, সূরা আলে-ইমরান, কুরআন

“হে মুসলমানগণ! কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করে যাও, যতক্ষণ কোনো ফ্যাসাদ (বাকি) না থাকে এবং (সমস্ত বিশ্বে) খোদার দ্বীনই দ্বীন ছড়িয়ে যায় এবং তারপর যদি এই লোকেরা (ফ্যাসাদ) ত্যাগ না করে তাহলে খোদা তাদের কর্ম বেশ দেখেন।”
-02:193 সূরা আল-বাকারা, কুরআন

“এই উম্মায় সৈন্যরা সিন্ধ ও হিন্দের দিকে অগ্রসর হবে।”
-কিতাব আল-ফিতান (নাইম ইবনে হামাদ)

“উম্মতের একটি দল ভারতকে পরাজিত করবে। আল্লাহ ওদের কাছে ভারতকে উন্মুক্ত করে দেবে যতক্ষণ না ওরা সেখানকার রাজাদের শৃঙ্খলিত করে নিয়ে ফিরে আসে। আল্লাহ ওই যোদ্ধাদের ক্ষমা করবে। যখন ওরা (ভারত থেকে) ফিরে আসবে, ওরা সিরিয়ায় ঈসা ইবনে মরিয়মকে পেয়ে যাবে।”
-কিতাব আল-ফিতান (নাঈম ইবনে হাম্মাদ)

“জেরুসালেম (বায়তুল মুকাদ্দাস) এর একজন সুলতান যোদ্ধাদের নিয়ে ভারতের দিকে এগিয়ে যাবেন। যোদ্ধারা হিন্দের ভূমিকে ধ্বংস করে সেখানকার খাজানাকে দখল করে নেবে যেটা সুলতান জেরুসালেমের সাজসজ্জার জন্য ব্যবহার করবে। এই সেনাবাহিনী ভারতীয় রাজাদের জেরুসালেমের সুলতানের কাছে নিয়ে আসবে। সুলতানের আদেশে তার যোদ্ধারা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যেকার সমস্ত অঞ্চলকে পরাজিত করে দাজ্জালের উপস্থিতি অবধি ভারতে থাকবে।”
-কিতাব আল-ফিতান (নাঈম ইবনে হাম্মাদ)

উপরে বর্ণিত কুরআনের আয়াত এবং হাদিসগুলি ছাড়াও একজন সিরিয়ার ইতিহাসবিদ ইমাম ইবনে কাঠির তার ‘আল-বিদায়া ওয়া-এন-নিহায়া’ গ্রন্থে লিখেছেন যে গজওয়া-এ-হিন্দ এর ভবিষ্যৎবাণীর অনুসারে মোহাম্মদ গজনবী 1024 সালে গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের ওপরে আক্রমণ করেছিল।

পঞ্চদশ শতাব্দীর পারস্যের সুফি ইসলামী আলিম ও কবি শাহ নেমাতুল্লাহ ওয়াল তার গীতিকাব্য “পেশানগোই’য়ে গজওয়া-এ-হিন্দের ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে বলেছে যে, বিশ্বের চারটে প্রান্তের মুসলিম যোদ্ধারা হিন্দের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে এক হয়ে দাঁড়াবে এবং তারপরে ওরা গঙ্গা নদী পর্যন্ত জয় করবে। এরপর মুজাহিদীনদের দ্বারা যুদ্ধে জয় করা গনিমতের মালের মধ্যে সুন্দরী কাফের মেয়েরা এবং ভালবাসার যোগ্য লাবণ্যময়ী মহিলারাও শামিল থাকবে।

গত 1,400 বছরের এই সময়কালে কাফেরদের ওপরে বিজয় পাবার জন্য এই সমস্ত ইসলামী যুদ্ধকে ‘গজওয়া’ বলা হল এবং যে সমস্ত মুসলমানরা এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিল ওদের ‘গাজী’ নামে বিভূষিত করা হল। যখনই কোনো হানাদারের বা আক্রমনকারীর নামের আগে ‘গাজী’ লাগানো থাকে, তখনই বুঝে যাবেন যে ও অমুসলিমদের গণহত্যার মাধ্যমে ইসলাম প্রচারে ব্যাপক অবদান রেখেছে। উত্তর প্রদেশের বর্তমান শহর ‘গাজিয়াবাদ’ তত্কালীন ইসলামী মৌলবাদী গাজীউদ্দিন (গাজী + উদ + দ্বীন অর্থাৎ ধর্মের গাজী) এর নামানুসারে রাখা হয়েছিল যে সেখানে বসবাসরত স্থানীয় অমুসলিমদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল বা তাদের মতান্তর করিয়ে বা তাদের জিজিয়া প্রদান করার জন্য বাধ্য করে সেখানে ইসলামী পরিবেশ চালিয়ে গেছে।

এই গত জিহাদী কালখন্ডে বৃহৎ ভারতবর্ষকে ভেঙে বহু ইসলামিক দেশে রূপান্তরিত করে ফেলা হয়েছিল। তারপরেও অ-ইসলামিক ভূমিটিকে ইসলামিক ভূমিতে রূপান্তরিত করার ক্ষুধা এই ইসলামী মতাদর্শটির সমাপ্ত হয়নি এবং এটি অবশিষ্ট ভারতবর্ষকেও ইসলামিক দেশে রূপান্তরিত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকে নতুন নতুন মোড়ক দেওয়া শুরু করে দিলো। সুতরাং, গত কয়েক দশকে শেষ ভারতবর্ষে রাজত্ব করছে যে তথাকথিত উদারবাদী এবং সেক্যুলার সরকারগুলি, ওদের মাধ্যমে মুসলমানদের দ্বারা গজওয়া-এ-হিন্দের অন্তিম লক্ষ্য অর্জনের জন্য চূড়ান্ত উদ্যোগ আরম্ভ হয়ে গেছে। একদিকে যেমন সেক্যুলারিজমের রোগগ্রস্ত রাজনৈতিক-সামাজিক দল এবং ইসলামী-বামপন্থী মিডিয়া হাউসগুলি অ-ইসলামিক শক্তিগুলিকে ভাগ করতে লেগে রয়েছে, সেখানেই অন্যদিকে, এর সুবিধা গ্রহণ করে, ইসলামী দল গজওয়া-এ-হিন্দ নীতিটি কার্যকর করার জন্য চূড়ান্ত চেষ্টা করছে। উভয় ক্ষেত্রেই এই সমস্ত হিন্দুবিরোধী ষড়যন্ত্রগুলিকে সেক্যুলারিজমের জামা পরানো হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসরত অ-ইসলামিক সম্প্রদায় যদি সময় মতো চোখ না খুলতে পারে তবে তাদের জন্য বেশি দেরি হয়ে যাবে এবং আগামী সময়ে তাদের ডুবে মরার জন্য এক কোষ জলও থাকবে না।

শলোॐ…!

এই পোস্ট টি এই ভাষাগুলিতে উপলব্ধ–

हिंदी বাংলা | ગુજરાતી